News Details

সংবিধান সংস্কার প্রস্তাবনা
প্রস্তাবনা
বাংলাদেশ ভূখন্ডের ঐতিহাসিক আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ, ৯০ এর গণঅভ্যুত্থান ও ২৪ এর ছাত্র-জনতার বৈষম্য বিরোধী গণঅভ্যুত্থানের চেতনা ও লক্ষ্য অনুযায়ী সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, গনতন্ত্র ও মানবাধিকার, এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক বৈষম্যহীন সমাজ গঠন।
প্রথম ভাগঃ প্রজাতন্ত্র
· অনুচ্ছেদ ০১: “গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ” এর ”প্রজা” শব্দটি বৈষম্যপূর্ন । ”প্রজা” শব্দটি বাদ দিয়ে Peoples Republic এর একটি যুৎসই বাংলা শব্দ প্রনয়ণ করা যেতে পারে।
· অনুচ্ছেদ ৬ (১): নাগরিকত্ব নির্ধারনের ক্ষেত্রে ‘আইনের দ্বারা’ এর পরিবর্তে ’জন্মসূত্রে ও আইন দ্বারা” নির্ধারিত ও নিয়ন্ত্রিত হবে। (জন্মসূত্রে যুক্ত করার প্রস্তাব করছি)
· অনুচ্ছেদ ৬ (২): বাংলাদেশের জনগণ বাংলাদেশী হিসেবে পরিচিত হবেন। (”জাতি হিসেবে বাঙালী” পরিবর্তন করার প্রস্তাব করছি, যেহেতু এখানে অন্যান্য অনেক জাতিগোষ্ঠীর লোকজনও বসবাস করে)
· অনুচ্ছেদ ০৭ (১): অনুচ্ছেদ ০১ এর সাথে সামঞ্জস্য রেখে ’প্রজাতন্ত্র’ শব্দটি পরিবর্তন করে ‘বাংলাদেশের সকল ক্ষমতার মালিক এই রাষ্ট্রের নাগরিক’ দেয়া যেতে পারে।
· অনুচ্ছেদ ৭(ক, খ) বাদ দেয়ার প্রস্তাব করছি। সংবিধান সংশোধন যোগ্য রাখতে হবে। কেননা সংবিধান জনগনের জন্য। জনগনের চাহিদা অনুযায়ী সময়ের প্রয়োজনে সংশোধন করার সুযোগ থাকা উচিৎ। সেক্ষেত্রে সংসদ সদস্যদের উভয়কক্ষের দুই তৃতীয়াংশের ভোটে এবং গনভোটের মাধ্যমে পরিবর্তন করা যাবে।
দ্বিতীয় ভাগঃ রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি
· অনুচ্ছেদ ৮(১): রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে “সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, গনতন্ত্র ও মানবাধিকার, এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক বৈষম্যহীন সমাজ গঠন” হবে মূলনীতি।
· অনুচ্ছেদ ২৩(ক): “উপজাতি ও ক্ষুদ্র জাতিসত্ত্বা” শব্দসমূহ বাদ দিয়ে “রাষ্ট্র সকল নৃ-গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের অনন্য বৈশিষ্ট্যপূর্ন আঞ্চলিক সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও বিকাশের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে”।
তৃতীয় ভাগঃ মৌলিক অধিকার
মৌলিক অধিকার হিসেবে সংবিধানে উল্লেখিত অধিকার সমূহের সাথে নাগরিকদের জন্য নিম্নোক্ত অধিকারসমূহ সংযোজনের প্রস্তাব করছি-
· “অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসাসহ জীবনধারনের মৌলিক উপকরণের ব্যবস্থা” নিশ্চিত করতে হবে।
· শিক্ষার সকল স্তরে “নৈতিক ও মানবাধিকার শিক্ষা” নিশ্চিত করতে হবে।
· স্বাস্থ্যসম্মত ও দূষণমুক্ত পরিবেশে বাঁচার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। (অনুচ্ছেদ ১৮/ক অনুরূপ)
· অনুচ্ছেদ ৩৯ এ নাগরিকদের “নিরবিচ্ছিন্ন ইন্টারনেট ব্যবহারের” অধিকার যুক্ত করতে হবে।
চতুর্থ ভাগঃ নির্বাহী বিভাগ
(১ম পরিচ্ছেদ)
· প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপ্রতির ক্ষমতার ভারসাম্য নিশ্চিত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
· অনুচ্ছেদ ৪৯: মহামান্য রাষ্ট্রপতির নিজ ক্ষমতাবলে দন্ড হ্রাস ও স্থগিত করার ক্ষমতা থাকবে, মওকুফ করার ক্ষমতা বিলুপ্ত করা প্রয়োজন। (“কেউ আইনের উর্ধ্বে নয়” আইনের এই মূলনীতি বাস্তবায়ন ও গুরুতর অপরাধী যাতে শাস্তি থেকে রেহাই না পায় তা নিশ্চিত করার জন্য এই প্রস্তাবনা।)
চতুর্থ ভাগ: (২য় পরিচ্ছেদ)
· অনুচ্ছেদ ৫৬ (৪) বিলুপ্ত করতে হবে। (যেহেতু তত্ত্বাবধায়ক/অন্তবর্তীকালীন সরকার ব্যবস্থার পুনর্স্থাপন প্রস্তাব করছি)
· অনুচ্ছেদ ৫৭: এর অধীনে সংযোজন হবে:
-কোন ব্যক্তি ২ (দুই) বারের অধিক প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হতে পারবেন না।
-একজন ব্যক্তি একই সাথে দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী পদে থাকতে পারবেন না।
· ৫৮(২ক পরিচ্ছেদ): নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক/অন্তবর্তীকালীন সরকার পূনর্বহাল করতে হবে। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক/অন্তবর্তীকালীন সরকার গণভোটের মাধ্যমে পরিবর্তন করা যাবে।
চতুর্থ ভাগ: (৩য় পরিচ্ছেদ)
· স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা শক্তিশালী ও কার্যকর করতে স্থানীয় প্রশাসনে ও উন্নয়ন কার্যক্রমে সংসদ সদস্যদের কোন ভূমিকা থাকবে না।
পঞ্চম ভাগঃ আইনসভা (১ম পরিচ্ছেদ)
· সংসদ হবে দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট।
· নিম্ন কক্ষের সদস্য সংখ্যা হবে ৩০০ জন, যারা জনগনের ভোটে নির্বাচিত হবেন।
· সংসদের নারী সংরক্ষিত আসন বাতিল করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলো সংসদ সদস্য নির্বাচনে মনোনয়নের ক্ষেত্রে কমপক্ষে ২০% নারী সদস্য মনোনয়ন দিবেন।
· উচ্চ কক্ষের সদস্য সংখ্যা ১০৫ জন হবে, যাদের মধ্যে ১০০ জন সদস্য নিম্ন কক্ষের প্রতিনিধি নির্বাচনের সময় রাজনৈতিক দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের আনুপাতিকহারে নির্বাচিত হবেন।
· উচ্চকক্ষ: অবসরপ্রাপ্ত বিচারক, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি, সচিব, উচ্চ পদস্থ সামরিক কর্মকর্তা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি এবং বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষজ্ঞবৃন্দ যেমন শ্রম, শিল্প, অর্থনীতি, ব্যাংকিং, বিনিয়োগ, বাজার অর্থনীতি, জলবায়ু, পানি, নদী, মানবাধিকার এবং ধর্মীয় বিশেষজ্ঞসহ বিভিন্ন বিষয়ের বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে উচ্চ কক্ষ গঠিত হবে।
· মহামান্য রাষ্ট্রপতি ৫ জন সদস্যকে টেকনোক্র্যাট সদস্য হিসেবে উচ্চকক্ষে মনোনীত করতে পারবেন। তিনি বিভিন্ন সুবিধাবঞ্চিত সম্প্রদায় ও বিষয়ভিত্তিক বিজ্ঞ ব্যক্তিদের নিয়োগ দিবেন।
· উচ্চ কক্ষে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি ১০ জন সদস্যের মধ্যে অন্তত ৩ জন নারী সদস্যকে মনোনীত করবেন।
· জাতীয় নির্বাচনের সময় ১ মাস সেনাবাহিনীকে মেজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে সারাদেশে মোতায়ন করতে হবে।
· অনুচ্ছেদ ৭০ (খ): আইন পাশের ক্ষেত্রে সংসদ সদস্যগণ স্বাধীন মতামত ও ভোট প্রদান করতে পারবেন। কিন্তু রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও স্পীকার নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ভোট প্রদান করবেন।
· অনুচ্ছেদ ৭১ (১): একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ একটি সংসদীয় আসনে প্রতিদ্বন্দিতা করতে পারবেন।
· অনুচ্ছেদ ৭১ (২): বাতিল করতে হবে।
· অনুচ্ছেদ ৭৪ (১): উভয় কক্ষে স্পীকার সরকারী দল থেকে এবং ডেপুটি স্পীকার বিরোধী দল থেকে নির্বাচিত হবেন।
· অনুচ্ছেদ ৭৭: ন্যায়পালকে কার্যকরী করতে হবে।
পঞ্চম ভাগ: (২য় পরিচ্ছেদ)
· অনুচ্ছেদ ৮০: সংসদের নিম্নকক্ষ কর্তৃক গৃহীত প্রস্তাবনা উচ্চকক্ষে সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠের ভিত্তিতে পাস করতে হবে।
ষষ্ঠ ভাগঃ বিচারবিভাগ
· বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বিচার বিভাগ সংক্রান্ত সচিবালয় সুপ্রিম কোর্ট দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে।
· নিন্ম আদালত থেকে শুরু করে উচ্চ আদালত- সব ক্ষেত্রেই বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগের নিয়ন্ত্রণমুক্ত করতে হবে।
ষষ্ঠ ভাগ (১ম পরিচ্ছেদ)
· অনুচ্ছেদ ৯৫: সুপ্রিম কোর্টে বিচারক নিয়োগ “বিচারক নিয়োগ আইন” প্রনয়ন করত তদানুযায়ী করতে হবে।
সপ্তম ভাগঃ নির্বাচন
· সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে পৃথক “স্বাধীন নির্বাচন কমিশন সচিবালয়” প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
· নির্বাচন কমিশনের সাংগঠনিক কাঠামো পূনর্বিন্যাস করতে হবে।
নবম-ক ভাগঃ নির্বাচন
· (অনুচ্ছেদ- ১৪১গ) 'জরুরী অবস্থার সময় মৌলিক অধিকারসমূহ স্থগিতকরণ' বাতিল করতে হবে।
উপরোক্ত সুচিন্তিত প্রস্তাবনাসমূহ বিবেচনা করার জন্য সংবিধান সংস্কার কমিশনকে আহবান জানাচ্ছি।